
সভ্যতার ঊষালগ্ন থেকেই ভারতীয় উপমহাদেশে শিল্পচর্চাকে ঊর্ধ্বে স্থান দেওয়া হয়েছে। স্থাপত্যশৈলী উপবেদের অন্যতম বিষয়। স্থাপত্য উপবেদ বা স্থাপত্যশাস্ত্র চারটি উপবেদের অন্যতম। স্থাপত্য উপবেদ আবার অথর্ববেদ থেকে এসেছে। প্রায় ৫০০০ বছর ধরে বাস্তুবিদ্যা কালের বিরুদ্ধে নিরন্তর সংগ্রামে জয়ী হয়েছে। স্থাপত্য উপবেদ বা স্থাপত্য শাস্ত্রের সূত্রগুলি পরবর্তি কালে ‘বাস্তুশাস্ত্র’ শিরোনামে লিপিবদ্ধ হয়েছে। বৈদিক যুগে স্থাপত্য বিজ্ঞান মূলত মন্দির নির্মাণে ব্যবহৃত হত। পরবর্তীতে তা বিস্তার লাভ করে। প্রাচীন যুগে স্থপতিরা কেবল নিছক রাজমিস্ত্রির ভূমিকা পালন করতেন না, নির্মাণশৈলী ও পরিকল্পনার বিষয়টিও তদারকি করতে হত তাঁদের।
এই পৃথিবী পঞ্চভূতাত্মক। এতে তত্ত্বের সমাবেশ ঘটেছে। এই পাঁচটি তত্ত্ব হল -ক্ষিতি, অপ, তেজ, মরুৎ, ব্যোম। ঠিক একইভাবে মানুষের শরীরেও এই পাঁচটি তত্ত্বের মিশ্রণ ঘটেছে। ধরিত্রীতে এই পাঁচটি গুণই বর্তমান।যথা- শব্দ,স্পর্শ, রূপ, রস ও গন্ধ।একইভাবে পৃথিবীর ওপর যে কোনও ধরণের নির্মাণ এই পাঁচটি তত্ত্বের ওপর গড়ে ওঠে। সুতরাং স্থূল ও সূক্ষ্ম উভয়ার্থেই এই তত্ত্ব কার্যকরী। মানুষ তার নিজের বুদ্ধিতেই এই তত্ত্বের রহস্য জেনেছে। কিন্তু এই পঞ্চভূতের সূক্ষ্ম ও অদৃশ্য অন্তঃসম্বন্ধকে নিজের ইচ্ছানুসারে সামঞ্জস্য করার ক্ষমতা তার সাধ্যের বাইরে। সুতরাং প্রকৃতির পঞ্চভূতাত্মক ব্যবস্থাকে ব্যাহত না করে আমাদের চলতে হবে। যদি ওই ব্যবস্থায় কোনও রকমের নাক গলানো হয় তা হলে অনেক রকমের অঘটন বা বিপদ দেখা দিতে পারে। বাস্তুশাস্ত্রের নিয়মগুলি পড়লেই বোঝা যাবে, প্রকৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্য করে আমরা যদি আমাদের বাসস্থান বা কর্মস্থলের নকশা তৈরী করি, তা হলে সেখানকার বাসিন্দা বা কর্র্মীদের মধ্যে পারস্পরিক মধুর সম্পর্ক গড়ে উঠবে এবং জীবন কাটবে অপার সুখশান্তিতে।
ওরে বাবা…………….এসব কি? এটাই ভাবছেন নিশ্চয়ই,…………… এটা ভাবাই স্বাভাবিক। ভাবছেন বেশ তো ছিলাম, গোপালবাবু আবার …………………..
আসুন দেখে নেওয়া যাক –
হিন্দুদের তথা সনাতন ধর্মের প্রধান ধর্মগ্রন্থ বেদের শেষ অংশ অথর্ব বেদ – এ বাস্তু নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। সেখানে ষোলটি কক্ষ ও মাঝখানে উঠোনযুক্ত বাড়িকে উত্তম মনে করা হয়েছে। পূর্বদিকে স্নানাগার ও জলাধার হবে। অগ্নিকোণে রান্নাঘর, বৈদুতিক সাজসরঞ্জাম রাখার ঘর করতে হবে। উত্তরে দামি বা বহুমূল্য জিনিসপত্র রাখার ভাণ্ডার ও ধনসম্পদ রাখা যেতে পারে। অগ্নিকোণে ও পূর্বদিকের মাঝখানে ঘি, তেল, দধিমন্থন ঘর হওয়া উচিত। এই ধরণের বাড়িকে উত্তম বলা হয়েছে।
পশ্চিম দিকে খাওয়ার ঘর হবে। পশ্চিম ও নৈর্ঋত দিকের মাঝখানে পড়ার ঘর অথবা অতিথি কক্ষ করা উচিত। বায়ব্য দিকে পশুশালা, রথ বা বাহন রাখার জায়গা করতে হবে। পশ্চিম ও উত্তরের মধ্যে রোদনগৃহ বা শোককক্ষ তৈরি করা যেতে পারে। নৈর্ঋত দিকে পাদুকা রাখতে হবে। নৈর্ঋত ও পশ্চিম দিকের মাঝখানে শৌচাগার নির্মাণ করা যেতে পারে। পশ্চিম দিকে ছোট ছেলেমেয়েদের থাকার ঘর করা উচিত। বায়ব্য দিকে কুমারী মেয়েদের থাকার ব্যবস্থ থাকবে। কারণ এই রকম ঘরে কুমারী মেয়ে থাকলে তার বিবাহে বিলম্ব দোষ কেটে যাবে।
বাস্তু দিক্দর্শন :
আধুনিক যুগে জমির অভাব, বড় বাড়ি তৈরি করাও প্রায় অসম্ভব। তবে ষোল ঘরের বাড়ি আজকের দিনে কল্পনা করাও বৃথা। ষোলকক্ষযুক্ত বাড়ি সম্ভব না হলে এগারো কামরা, নয় কামরা, সাত কামরা, পাঁচ কামরাযুক্ত বাড়ি করা যেতে পারে। তাও যদি সম্ভব না হয় তা হলে অন্ততপক্ষে তিন কামরার বাড়িও ভাল। এই প্রেক্ষিতে আধুনিক প্রয়োজনের কথা মনে রেখে আদর্শ বাড়ির জন্য বিভিন্ন অনুকুল দিক্ ও অন্যান্য পরামর্শের কথা বলা হয়েছে। পরিস্থিতি ও প্রয়োজন অনুসারে এই সব দিক্ ও পরামর্শ অনুসরণ করে অবশ্যই লাভবান হওয়া যায়।

উচিত অনুচিত নিদর্শ :
গ্যারেজ : গ্যারেজ হওয়া উচিত দক্ষিণ-পূর্ব বা উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলে।
ব্রহ্মস্থান : জমির মাঝখানে অর্থাৎ একেবারে মধ্যস্থলে কোনও রকমের ভারী নির্মাণ কর্ম বাঞ্ছনীয় নয়। যেমন বিম কলাম, পিলার, দেওয়াল ইত্যাদি যেন জমির মাঝখানে না থাকে। একই রকমভাবে কোনও ঘরের মাঝখানে কোন রকমের ভারী কিছু বসানো বাঞ্ছনীয় নয়। কারণ মধ্যস্থলটি হল ব্রহ্মস্থান।
বারান্দা : উত্তর ও পূর্ব দিকে করতে হবে বারান্দা। বারান্দার ছাদের স্তর বাড়ির ছাদের স্তরের এক সমান যেন না হয়।
নলকূপ ও সেপটিক ট্যাঙ্ক : নলকুপ, কুয়ো ইত্যাদি উত্তর-পূর্ব দিকে তৈরি করতে হবে। উত্তর-পূর্ব দিকের কোণসূত্রের উপর যেন নলকুপ বসানো না হয়। সেপটিক ট্যাঙ্ক দক্ষিণ-পূর্ব বা উত্তর-পশ্চিমে করা যেতে পারে। এটিও যেন কোণসূত্রের উপর না বসে।
ওভারহেড ট্যাঙ্ক : ওভারহেড ট্যাঙ্ক যেন দক্ষিণ-পশ্চিম দিকের পশ্চিমে হয়।
আউটহাউস : উত্তর বা পশ্চিম দিকে সীমানা প্রাচীরের দেওয়াল স্পর্শ না করে আউটহাউস তৈরি করতে হবে। আউটহাউসের উচ্চতা প্রধান দেওয়ালের উচ্চতার চেয়ে কম হওয়া বাঞ্ছনীয়।
বাইরে যাওয়ার দরজা : প্রধান দরজার চেয়ে ছোট আকারে অন্য দিকে যাওয়ার দরজা তৈরি করা উচিত। এই দরজার উচ্চতা প্রধান দরজার মতো রাখা যাবে, কিন্তু চওড়ায় যেন ছোট হয়।
খাওয়ার ঘর : খাওয়ার ঘরের অবস্থান নির্ভর করছে রান্নাঘরের অবস্থানের উপর। আদর্শ রান্নাঘর হিসাবে যদি দক্ষিণ-পূর্বে রান্নাঘরের অবস্থান হয়, তবে পূর্বদিকে খাওয়ার ঘর করা উচিত। এবং যদি উত্তর-পশ্চিমে রান্নাঘর হয় তবে পশ্চিম দিকে খাওয়ার ঘর করা উচিত। খাওয়ার টেবিল অবশ্যই আয়তাকার হওয়া উচিত। গোল বা ছয় কোণযুক্ত টেবিল না হওয়াই বাঞ্ছণীয়। খাওয়ার ঘরের দক্ষিণ-পূর্বে বা উত্তর-পশ্চিমে রেফ্রিজারেটর রাখা উচিত এবং উত্তর-পূর্বে খাওয়ার জল, জলের ফিল্টার ও বেসিন রাখতে হবে।
বসবার ঘর : বাড়ির এবং অতিথিদের বসবার ঘর হবে পূর্ব বা উত্তর-পশ্চিম দিকে। বাড়ির কর্তা পূর্ব বা উত্তর দিকে অভিমুখ করে অতিথিকে আপ্যায়ন করবেন। বসবার জায়গাগুলি এমনভাবে সাজাতে হবে যাতে অতিথি পশ্চিম বা দক্ষিণ দিকে তাকিয়ে কথা বলেন এবং বাড়ির কর্তা পশ্চিম বা দক্ষিণ দিকে থাকবেন। এতে বাড়ির কর্তা এবং অতিথি উভয়ের পক্ষে শুভ।
পড়ার ঘর : উত্তর বা পশ্চিম দিকের ঘরে পড়ার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। কিন’ পড়বার সময় অবশ্যই পূর্ব বা উত্তর দিকে তাকিয়ে পড়াশুনা করা উচিত। পড়বার টেবিলের ঢাকা বা টেবিল ক্লথ যদি হালকা সবুজ রঙের হয় তবে পড়াশুনায় মনোনিবেশ করতে সাহায্য করে। মনোবিজ্ঞানীদের তথ্য থেকে এটা প্রমাণিত। পড়ার ঘরের দরজা উত্তর-পূর্ব দিকে হলে ভাল হয়।
কর্তার শোওয়ার ঘর : কর্তার শোওয়ার ঘর হবে দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে। কর্তার শোওয়ার খাট থাকবে দেওয়াল থেকে অন্তত তিন ইঞ্চি দূরে। কর্তার শোওয়ার অবস্থা হবে মাথা দক্ষিণ দিকে এবং পা উত্তর দিকে, কোনও মতেই মাথা উত্তর দিকে থাকবে না। তার বিজ্ঞানসম্মত কারণ হচ্ছে মানুষের মাথা দেহের অন্যান্য অংশের চেয়ে ভারী। উত্তর দিকে মাথা রেখে ঘুমোলে নানা রকম রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।আরো একটি কারণ হচ্ছে উত্তর মেরু এবং দক্ষিণ মেরু শরীরের উপর চৌম্বকীয় প্রভাব সৃষ্টি করে। ঘরের সংলগ্ন শৌচাগার উত্তর-পশ্চিম অথবা দক্ষিণ-পূর্বে করতে হবে। ওই ঘরের দরজা উত্তর বা পূর্বে রাখা উচিত। প্রধান আলমারি ঘরের দক্ষিণ-পশ্চিম খাটের পাশে এমনভাবে রাখতে হবে যাতে আলমারির মুখ থাকে উত্তর দিকে। ওই আলমারিতে গৃহকর্তা তাঁর মুল্যবান কাগজ ও দলিলপত্র এবং টাকা-পয়সা রাখবেন। কারণ এই উত্তর দিক্ই হচ্ছে বুধ গ্রহের
দিক্”। দক্ষিণ-পশ্চিমে ভারী আলমারি রাখা সম্ভব না হলে কর্তার ঘরের উত্তরে ছোট আলমারিতে টাকা-পয়সা রাখা যেতে পারে।
ছেলের শোওয়ার ঘর : ছেলে যদি বিবাহিত হয় তা হলে তার শোওয়ার ঘরে অবস্থান হবে বাড়ির দক্ষিণ-পূর্বে। এটা যেহেতু আগ্নেয়-কোণ, সেহেতু বিবাহিত জীবনযাপনের পক্ষে সুখকর। ছেলে যদি অবিবাহিত হয় বা ছাত্রাবস্থায় থাকে তা হলে তাকে পূর্বে অথবা উত্তরের ঘরে শোওয়ার ব্যবসথা করে দিতে হবে। বিদ্যার্থীর মাথা পূর্ব, দক্ষিণ দিকে রেখে ঘুমানো শাস্ত্রসম্মত।
কন্যার শোওয়ার ঘর : কন্যার শোওয়ার ঘর হবে উত্তর-পশ্চিম দিকে কারণ জ্যোতিষ মতে এটি চন্দ্রের স্থান এবং সঙ্গীত ও কলার পক্ষে শুভ।
কিশোরের শোওয়ার ঘর : কিশোরদের শোওয়ার ঘর হবে পশ্চিম দিকে। শোওয়ার খাটকে ঘরের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে রাখতে হবে। কিশোরদের মাথা পূর্ব, দক্ষিণ দিকে রেখে শোওয়া চলে। শোওয়ার খাট যেন দেওয়ালকে স্পর্শ না করে।
উপাসনালয় : উপাসনালয় এর অবস্থান বাড়ির উত্তর-পূর্ব দিকে হওয়া অবশ্যই বাঞ্ছনীয়। এটা জ্যোতিষমতে বৃহস্পতির স্থান এবং বৈজ্ঞানিক মতে এই দিক্ ধনাত্মক শক্তির প্রাচুর্যে ভরা। এই কারণে প্রার্থনার জন্য এই দিকটি উৎকৃষ্ট স্থান। বিদ্যার্থীরাও এই দিক্কার ঘর ব্যবহার করতে পারে এবং যোগব্যায়াম বা সাধনা করার পক্ষে এই দিক্ উৎকৃষ্ট। যে সমস্ত মালিকানাযুক্ত ফ্ল্যাট বাড়িতে উত্তর-পূর্ব দিকে নামাজ ঘর নির্মাণ করার উপায় না থাকে তবে সেই সব স্থলে “ব্রহ্মস্থানে” ছোট করে উপাসনালয় নির্মাণ করা যেতে পারে।
অতিথিদের ঘর : অতিথিদের থাকার ঘরের অবস্থান হবে বাড়ির উত্তর-পশ্চিম দিকে।
অসুস্থ ব্যক্তিদের ঘর : অসুস্থ্ ব্যক্তির ঘরের অবস্থান উত্তর-পূর্ব দিকে ভাল হয়। এতে সে তাড়াতাড়ি সুস্থ্য হয়ে উঠবে এবং সুস্বাস্থ্য লাভ করবে।
শোকাতুর ঘটনা ঘটলে : মৃত ব্যক্তির জন্য বাড়ির পশ্চিম দিকের ঘরে ব্যবস্থা করতে হবে এবং মৃত ব্যক্তির ক্রিয়াকার্যাদি পশ্চিম দিকে করতে হবে, বিশেষত উঠোনে।
আঁতুড়ঘর : আগেকার দিনে বাড়ির মধ্যেই একটি পৃথক ঘরে শিশুর জন্ম হত। শিশু জন্মের আগে থেকেই একটি নির্দিষ্ট ঘরকে আঁতুড়ঘর ঠিক করে তাতে সন্তানসম্ভবা মহিলাকে রাখা হত। এখনও আমাদের দেশে পল্লি অঞ্চলে বাড়ির আঁতুড়ঘরেই শিশুরা ভূমিষ্ঠ হয়ে থাকে। তবে এই ব্যবস্থা দ্রুত পালটে যাচ্ছে। এখন শহরতলিতেও হাসপাতাল বা নার্সিং হোম অথবা মেটারনিটি হোমে শিশুদের জন্ম হয়। এখনকার ফ্ল্যাটবাড়ির সংস্কৃতিতে পৃথক আঁতুড়ঘর করার কথা ভাবাও অসম্ভব। তবে হাসপাতাল ও নাসিং হোম প্রভৃতির আঁতুড়ঘর উত্তর-পূর্বদিকে হলে মা-শিশু উভয়ের পক্ষেই ভাল। শিশুর ভূমিষ্ঠ হওয়ার স্থান উত্তর-পূর্ব দিকে হওয়া উচিত। এতে শিশুর জন্ম হয় নির্ঝঞ্ঝাটে। ফ্ল্যাট বা বাড়িতে গর্ভবতী মহিলাদের উত্তর-পূর্ব দিকের ঘরে থাকার ব্যবস্থা করা ভাল। সন্তানসম্ভবা মায়েদের পক্ষে এ ধরণের ঘরে থাকা সব দিক্ থেকে ভাল। যদি কোনও ফ্ল্যাট বা বাড়িতে উত্তর-পূর্ব দিকের ঘরে ব্যবস্থা না হয় তা হলে অন্ততপক্ষে উত্তর-পশ্চিম দিকের কোনও ঘর হলেও চলবে।
মেজানাইন ফ্লোর : যদি মেজেনাইন-এর প্রয়োজন হয় তবে তা দক্ষিণ দিকে করা যেতে পারে।
বেসমেন্ট : যদি করতে হয়ে তবে বেসমেন্ট উত্তর-পূর্ব দিকে করা যেতে পারে। দক্ষিণ বা পশ্চিম দিকে কোনও মতেই হবে না।
বিবিধ : প্রত্যেকটি ঘরের মাঝখানে ভারী কোনও কিছু জিনিস রাখা যাবে না। কেবল খাওয়ার ঘরে খাওয়ার টেবিল রাখা যেতে পারে। আলমারি, দেওয়াল আলমারি, আলনা ইত্যাদি ভারী জিনিসপত্র ঘরের দক্ষিণ, পশ্চিম অথবা দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে রাখতে হবে।
আয়না : আয়না রাখার আদর্শ জায়গা হচ্ছে ঘরের উত্তর বা পূর্ব দেওয়াল।
দেওয়াল ঘড়ি : যে কোনও ঘরের উত্তর, পূর্ব ও পশ্চিম দিকের দেওয়ালে লাগানো যেতে পারে।
পূর্বপুরুষদের ছবি : বাড়ির দক্ষিণ-পশ্চিম ঘরের দক্ষিণ দেওয়ালের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণটি পূর্বপুরুষের ছবি টাঙানোর সর্বশ্রেষ্ঠ স্থান। বিকল্পে যে কোনও ঘরের দক্ষিণ দেওয়ালের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে পূর্বপুরুষের ছবি টাঙানো যেতে পারে।
এ ছাড়াও বাড়ির দরজা জানালা র অবস্থান সহ বাড়ি তৈরির প্রায় সকল কিছুই বাস্তু নিয়ম কানুন মেনে করা উচিত ।
বাস্তুদোষ থাকলে আপনার কি কি অসুবিধা হতে পারে –
পারিবারিক কলহ, আয় কম ব্যয় বৃদ্ধি , আয়ুক্ষয় , শিক্ষার অবনতি , পেটের রোগ তৎসহ ক্রনিক রোগ আরো অনেক কিছু ……কি বিশ্বাস হচ্ছে না তো ? কিন্তু এটা প্রমানিত ?
এবার কিন্তু একটু মিলিয়ে নিতে হবে:-
মাটি, ভুমিখন্ড এবং বাড়ি বাস্তু নিয়ম অনুসারে তৈরি হবার পরও তাতে বসবাসকারী ব্যক্তিকে খানিকটা বাস্তু নিয়মের ভিতরে থেকে বসবাস করা উচিত –
১. শোবার সময় আপনার মাথা দক্ষিন বা পুর্ব দিকে রেখে শোওয়া উচিত।
২. দরজা, জানালা খোলা বা বন্ধ করার সময় সাবধান হওয়া উচিত , যাতে কর্কশ আওয়াজ না হয়।
৩. টেলিফোনের পাশে জলভর্তি কলসি বা বোতল রাখা যাবে না। টেলিফোন ধ্বনির বিধুষিত কিরণে জলের গুনগত মানের পরিবর্তন হতে পারে। তখন জল পানের জন্য ক্ষতিকারক।
৪. গুরুত্ত্বপুর্ন কাগজপত্রকে পুর্বদিকের আলমারির মধ্যে রাখা উচিত। অন্যথায় এর সঙ্গে সম্পর্কিত ঘটনা আপনার জন্য লাভদায়ক হবে না।
৫. ঘরে সিন্দুক থাকা জরুরী এবং এর অবস্থান ঈশান কোনে হওয়া বাধ্যতামুলক।
৬. রান্নাঘর অগ্নিকোনে এবং পুর্বদিকে মুখ করে রান্না করা উচিত। রান্নাঘরে সব্জী বা তরকারি কেটে মেঝেতে রাখা উচিত নয়।রান্নার আনুষাঙ্গীক জিনিষপত্র ডান দিকে রাখা উচিত এতে রান্নাঘরের শোভা বাড়ে ও রান্না করা খাবারের স্বাদ বাড়ে।
৭. নিজের ঘরের বিছানার চাদর দিনের বেলায় বদলিয়ে নেওয়া উচিত।
৮. চপ্পল, জুতো ছড়িয়ে ছিটিয়ে বা উল্টিয়ে রাখা উচিত নয় এতে পরিবারে ঝগড়া অশান্তি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
৯. রাতের পরা কাপড় সকালে বদলে ফেলুন ।আপনার কাচা কাপড়ের সঙ্গে ময়লা কাপড় রাখবেন না।
১০. যদি আপনি সেভিং করেন, তাহলে প্রতিদিন সেভিং করবেন। খোঁচা খোঁচা দাড়ি গরিবীর জন্ম দেয়।
১১. ঘরের দেওয়ালে বেশি ছবি টানাবেন না। যে কোন গুরুত্ত্বপুর্ন ছবি একটি বা দুটো টানালেই হবে । মৃত ব্যক্তির ছবি ড্রয়িংরুম বা সদর দরজার পাশে রাখবেন না ।
১২. চিরুনি এবং সাজ সজ্জার জিনিস পত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে নয়, যত্ন করে সাজিয়ে রাখুন।
১৩. সকালে উঠে সবার আগে সদর দরজায় এক গ্লাস জল ঢালা উচিত।
১৪. সব সময় চেষ্টা করুন সকালের সুর্যরশ্মি আপনার শরীরে যেন অধীক সময় পড়ে।
১৫. সুর্য উদয় হওয়ার পুর্বে আপনার উঠোনকে পরিষ্কার করে নেওয়া প্রয়োজন।
১৬. গুরুত্ত্বপুর্ন কাজে যাওয়ার সময় ডিম বা মাংস খাওয়া উচিত নয় এবং এর দর্শন করাও উচিত নয়। গুরুত্ত্বপুর্ন কাজে যাওয়ার সময় দই খাওয়া ও মাছের দর্শন শুভ বলে মানা হয়।
১৭. এই রকম পাখা ব্যবহার করা উচিত নয় যে কর্কশ ধ্বনি উৎপন্ন করে। এতে পরিবারে অশান্তির সৃষ্টি হতে পারে।
১৮. মানুষের জীবনে সুগন্ধের গুরুত্ত্ব অপরিসীম। আমাদের গুপ্ত ইন্দ্রিয় একে খুব তাড়াতাড়ি স্বীকার করে। তাই প্রায়-ই সন্ধ্যেবেলা এবং রাত্রিতে শোবার সময় সুগন্ধের ব্যবহার করা উচিত। এতে মানসিক শান্তি পাওয়া যায়।
তবে আমি হলফ করে বলতে পারি এতক্ষন ধরে আপনি যা পড়লেন বা বুঝলেন, সেগুলো মেনে চললে আপনার কোন ক্ষতি হবে না। তার পরেও আমি আছি তো………….