
লোকে বলে “বসন্ত এসে গেছে” । আমি বলি এত আনন্দের কি আছে । প্রখর গরমের দাবদাহকে আলিঞ্জন করার জন্য এত আনন্দ । পাতা ঝরার মধ্যেও আনন্দ । কয়েকজন ভদ্রলোকের কোন কাজ ছিল না তো তাই তারা সব সময় আনন্দেই থাকতেন। সবকিছুতেই উৎসব করতেন বর্তমানের মতো। তাদের চাকরি ব্যবসা কিছুই করতে হত না। একজনের তো শুধু কাগজ কলম পরসঙ্গ পেলেই দিন কেটে যেত আর একজনের তো প্রেম-ই ছিল অঙ্গের ভুষন, লিলা করাই ছিল মুল ও মুখ্য কাজ । আহার বিহারের কোন চিন্তা ছিল না । যাই হোক আমি বিতর্কত আলোচনা করছি । একটু পুরোনো থেকে-ই আগামি উৎসবের সামান্য ব্যাখ্যা বিভিন্ন লেখনি থেকে সংগ্রহ করেছি, নিজস্ব মতামত প্রদান করেছি ।
প্রাগার্য ইতিহাস
কতো নামে এক উৎসব :- বসন্তোৎসব, বসন্ত উসব, বাহার , হোলিকা দাহন উৎসব, হোলি, ফাগুয়া , শ্রীকৃষ্ণের দোলযাত্রা, ধুন্ধি ,কামবিলাস, কাম-দহন, ঐক্য, শিম্গা, শিগমো, উক্কুলি, মঞ্জলকুলি, হলুদ-স্নান, পান্গুণি-উত্থিরম্, শ্রীচৈতন্যের জন্মদিন এবং অনেক প্রাক্-হিন্দু দেবতা এই দিন বিবাহবার্ষিকী পালন করেন ।
বসন্তোৎসব :- কঠিন শীতের শেষে বসন্তের আহ্বানের জন্য আর্যরা শীতের প্রতিনিধি হিসাবে এক জন বুড় বা বুড়িকে একটা ভেড়ার পিঠের উপর বসিয়ে পূর্ণিমার রাতে ওই বুড় বা বুড়িকে পুড়িয়েদিত । পরের দিন থেকে শুরু হত বসন্ত ঋতু । তাই আর্যদের ভাষায় এই উৎসবটার নাম বসন্ত উসব ।
ধুন্দি উপাখ্যান : – রঘু বংশের পৃথু রাজত্বে ধুন্ধি বলে এক নর-রাক্ষসী ছিল। সে মহাদেবের কাছ থেকে বরপ্রাপ্ত ছিল, তাকে মারার ক্ষমতা কোনও দেবতার, মানুষের, অস্ত্রের এমনকী প্রাকৃতিক দুর্যোগেরও নেই। তবে কিছু উন্মত্ত বালকের হাতে তার প্রাণশঙ্কা রয়েছে। সেই মতো রাজ পুরোহিতের পরামর্শে ফাল্গুন মাসের পুর্নিমায় যখন পৃথিবী থেকে শীত চলে গিয়ে বসন্তের আবির্ভাব হয়, সেই ক্ষণে কিছু বালক কাঠ ও ঘাসের স্তুপে আগুন জ্বালিয়ে তার চারপাশে ঘুরে নেচে, গেয়ে, তালি বাজিয়ে মন্ত্র পাঠ করেন, ততে ধুন্ধির মৃত্যু হয়।
কামদেব -দক্ষ রাজা কতৃক শিবের অপমান সহ্য করতে না পেরে আগুনে ঝাঁপে দেন সতী। স্ত্রীর দুঃখে কাতর শিব পৃথিবী ভুলে গিয়ে ধ্যানমগ্ন হয়ে পড়েন। এই সময়ই হিমালয় কন্যা পার্ব্বতীও শিবকে কামনা করে ধ্যানে বসেন। শিবের এহেন আচরণে দেবতারা শঙ্কিত হয়ে কামদেবের দ্বারস্থ হন। কামদেব ধ্যানমগ্ন শিবকে লক্ষ্য করে তাঁর শর ছোঁড়েন। কামদেবের আচরণে শিব ক্ষিপ্র হয়ে ওঠেন ও তৃতীয় চক্ষু উন্মীলিত করে তাঁকে ভস্ম করে দেন। তবে কামদেবের শরের প্রভাবে পার্ব্বতীকে বিবাহ করেব শিব। পরে কামদেবের স্ত্রী রতির অনুরোধে তাঁকে পুররুজ্জীবন দান করেন শিব। পুরাণ মতে দোল পুর্নিমার দিনই কামদেবকে ভস্মে পরিণত করেছিলেন শিব।
পূতনা- শিশু কৃষ্ণকে বধ করতে রাক্ষসী পূতনার দ্বারস্থ হয়েছিলেন রাজা কংস। সুন্দরী রমনীর ছদ্মবেশে কৃষ্ণকে তাঁর বিষাক্ত স্তন্যপান করায় পূতনা। কিন্তু কৃষ্ণ তাঁর রক্তপান করে ও শেষপর্যন্ত পূতনার মৃত্যু হয়। হোলির আগের দিন রাত্রে কাঠ ও ঘাসের স্তুপ জ্বালানোর মাধ্যমে পূতনা বধের আয়োজন করা হয়। অশুভ শক্তির বিনাশ করাই এর লক্ষ্য। অপরদিকে শীতকে বিদায় জানিয়ে বসন্তের আগমন।
হোলিকা- সারা পৃথিবীতে একাধিপত্য স্থাপন করেন রাক্ষস রাজা হিরণ্যকশিপু। তাঁর দাবি ছিল পৃথিবীর সকলকেই শুধমাত্র হিরণ্যরশিপুর উপাসনা করতে হবে। কিন্তু তাঁর নিজের পুত্র প্রহ্লাদ ছিলেন বিষ্ণুর একনিষ্ঠ ভক্ত। প্রহ্লাদ বহুবার হত্যা করার চেষ্টা করেও বিষ্ণর আশীর্বাদে ব্যর্থ হব হিরণ্যকশিপু। শেষ পর্যন্ত তাঁর বোন হোলিকাকে হিরণ্যকশিপু অনুরোধ করেন শিশু প্রহ্লাদকে কোলে নিয়ে আগুনে প্রবেশ করতে। হিরণ্যকশিপু জানতেন বরপ্রাপ্ত হোলিকা আগুনে প্রবেশ করতে পারেন। হিরণ্যকশিপুর আদেশ পালন করেন হোলিকা। কিন্তু হোলিকা জানত না বর তখনই কার্যকর হবে যদি সে একা আগুনে প্রবেশ করে। অন্যথায় তার মৃত্যু হবে। ক্রমাগত বিষ্ণ নাম জপ করে রক্ষা পায় শিশু প্রহ্লাদ। সেই থেকেই উত্তর ভারতে দোল পুর্নিমার আগের দিন পালিত হয় হোলিকা দহন উৎসব। হোলি নামেরও উত্পত্তি হোলিকা শব্দ থেকেই।
রাধা-কৃষ্ণ- কাল মেঘের মত গায়ের রং। তাই দুঃখের অন্ত ছিল না বালক কৃষ্ণর। এদিকে রাধার দুধে আলতা রং দেখে ঈর্ষাও জাগে মনে। মা যশোদাকে দুঃখের কথা জানালে যশোদা কৃষ্ণকে বলেন তাঁর মনের মত রঙে রাধাকে রাঙিয়ে দিতে। দুষ্টু কৃষ্ণ ফাঁক বুঝে রং ঢেলে দেয় রাধার মুখে। সেই থেকেই শুরু হয় দোল খেলার রীতি। বির্তকিত উপাখ্যান- মধ্যযুগের বিখ্যাত চিত্রশিল্পগুলোর অন্যতম প্রধান বিষয় রাধা-কৃষ্ণের রঙ উৎসব। কথিত আছে বৃন্দাবনে রাধার সঙ্গে কৃষ্ণ সারারাত এতটাই যৌন (লীলাখেলায়) আনন্দ করেছিল যে রাধার সারা শরীর রক্তাক্ত হয়ে যায়। সেই বিষয়টি আড়াল করতে কৃষ্ণ সবাইকে রং দিয়ে খেলতে নির্দেশ দিয়েছিলেন ও নিজে রং খেলায় মেতে উঠেছিলেন। যেন রাধা রক্তাক্ত শরীর আড়াল করে বের হয়ে যেতে পারেন।
একটু অন্য ব্যাখ্যা –
১. অক্সফোর্ড ডিকশনারি সপ্তদশ শতাব্দী থেকে হোলি নিয়ে মাথা ঘামিয়েছে: ১৬৮৭ সালে অক্সফোর্ড লিখেছে Houly, ১৬৯৮ সালে Hoolee, ১৭৯৮-এ Huli, ১৮০৯-এ Hoh-lee, ইত্যাদি।
২. পণ্ডিত এস এম নটেশ শাস্ত্রীর বক্তব্য: ‘এর সঙ্গে কোনও ধর্মীয় অনুষ্ঠানের কিছুমাত্র যোগ নেই, তবে নির্বোধ আচরণ আছে প্রভূত পরিমাণে।’
৩. রোগজীবাণুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ জয়ের প্রতীক। বছরের এই সময়টাতেই তো যত রকমের রোগের জীবাণু ছড়িয়ে পড়ে এবং তার প্রধান বলি হয় ছোট শিশুরা।
চন্দ্রের অবস্থান – এই উৎসবের সময় চাঁদ ……………… নক্ষত্রে,
আমার দৃষ্টিকোনের প্রেক্ষাপট – আবহাওয়া পরিবর্তনের ক্ষেত্রে নিহিত আবেগতারিত যৌন ইঙ্গিত-
১. আপনার ঘরের লেপ তোষককে শীতের শেষ তাপে গরম করে তার পুর্বের স্থানে রেখে দেওয়া ।
২. সকল ঘরকে পুনরায় সাফাই করা, দেখবেন এই সময় সাদা ঝুল পড়বে, এগুলি ঝেরে ফেলা।
৩. ফ্যান গুলির ওপর থেকে কভার খুলে ফেলা ও সারাই করিয়ে নেওয়া , এ,সি, ফ্রিজ, সার্ভিসিং করিয়ে নেওয়া ।
৪. এখনও গরম জলে-ই স্নান করবেন । নিমজাতীয় সাবান ব্যবহার করুন ।
৫. ঘর সাফাই করে যে সকল উচ্ছিষ্ট পাবেন অপ্রয়োজনীয় গুলি একটি ছেড়া কাপড়ে বাঁধুন । কিছু কাঠ সহযোগে সেগুলিকে পুড়িয়ে দিন । পুরে ছাই হলে আপনার হাতের মাপে তিনমুঠো ছাই একটি লাল সালুতে বেঁধে আপনার প্রবেশ দ্বারের দক্ষিন হস্তে নিকট বেঁধে রাখুন । ঘর সাফাই করলে আপনার ঘর পরিস্কার হবে আবার নতুন করে শুরু করতে ইচ্ছে করবে। ছেঁড়া কাপড়ে না বাঁধলে উচ্ছিষ্টগুলি আপনি একত্রিত করতে পারবেন না, আপনি প্রয়োজনে ভালো কাপড়-ও ব্যবহার করতে পারেন। এই কাজটিকে আপনি স্বচ্ছ গৃহ অভিযান ও বলতে পারেন । এই পদ্ধতিটি সোমপুরানে পুর্বেই উল্লিখিত আছে, বর্তমানে বহুলব্যাপ্তিতে কেউ কেউ সেটির প্রয়োগ করছেন মাত্র। লাল রঙের ব্যবহার এহস্ত্রীর সিঁন্ধুর,পলা-তে করা হয়। তাই এটির ব্যখ্যা নিস্প্রয়োজন ।
৬. আহার পরিমিত করুন ।
৭. দিন ভেদে নিম বেগুন ভাজা খান ।
৮. কাঁচা হলুদ ও নিমপাতা বেঁটে গোটা গায়ে মাখুন ।
৯. ভালো রং সকল শরীরে মাখুন ।
১০. কাঁচা হলুদ খান ।
১১. হলুদ ও কাঁচা সরষের তেল সামান্য ভাতের সাথে খাবার শুরুতে খেয়ে নেওয়া । জল পানের পরিমান বাড়ানো ।
উল্লিখিত পদ্ধতিতে বসন্ত উৎসব পালন করলে বসন্ত রোগের সম্ভাবনা কম থাকবে ।
এছাড়া-ও আনন্দের সীমা রেখে আনন্দ করুন ।