বাড়িই হোক বা ফ্ল্যাট – তার কিচেন অর্থাত্‍ রান্নাঘরটি বাড়ির মহিলাদের পক্ষে ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ৷ কারণ দিনের বেশির ভাগ সময়টাই বাড়ির মহিলাদের কাটাতে হয়৷ তাছাড়া এখানে যেহেতু পরিবারের সকলের জন্য খাবার তৈরি হয়, তাই ঘরটির অবস্থান এবং রান্নাঘরের প্রয়োজনীয় আসবাব ও ইলেকট্রিকাল যন্ত্রপাতি রাখার ব্যবস্থা স্বাস্থ্যসম্মতভাবে যদি করা যায় তাহলে তা পরিবারের সকলের সুস্বাস্থ্য সুনিশ্চিত হবে৷ এই বিষয়ে নিম্নলিখিত টিপসগুলো যতটা সম্ভব মানতে পারলেই আপনার রান্নাঘরটি সম্পূর্ণ বাস্ত্ত পরিকল্পিত হতে পারে৷ ● বাড়ির দক্ষিণ-পূর্ব দিকটি নিয়ন্ত্রণ করেন অগ্নিদেবতা৷ তাই এই দিকটির নাম হল অগ্নিকোণ৷ রান্নাঘরের কাজকর্ম যেহেতু অগ্নি সম্পর্কিত তাই রান্নাঘরের অবস্থান ‘অগ্নিকোণ’-এ হওয়াই সর্বশ্রেষ্ঠ৷ ● সম্ভব না হলে রান্নাঘরটি উত্তর-পশ্চিমে করা যেতে পারে৷ ● তবে রান্নাঘর যেখানেই হোক না কেন – তা যেন বাড়ির ব্রহ্মস্থানে (অর্থাত্‍ মাঝখানে) যাতে না হয় তা সুনিশ্চিত করা প্রয়োজন৷ ● রান্নাঘরের কিচেন প্ল্যাটফর্মটি পূর্বদিকের দেওয়ালে করা উচিত যাতে পূর্বদিকে মুখ করে রান্না হয়৷ ● কোনওভাবেই উত্তর বা পশ্চিমদিকে মুখ করে রান্না নয়৷ ● বাস্ত্তশাস্ত্রের এই দিক নির্দেশ মেনে চললে রান্না করা খাবার যে রকম সুস্বাদু ও পুষ্টিকর হয় তেমনই অপচয় বন্ধ হয়৷ মা লক্ষ্মী, মা অন্নপূর্ণার আশীর্বাদও পাওয়া যায়৷ ● কিচেন বেঞ্চে দাঁড়িয়ে রান্না করুন বা বেঞ্চ না থাকলে বসেই রান্না করুন – কোনওভাবেই যেন গ্যাস ওভেন, স্টোভ কিংবা উনানের মুখ বাড়ির প্রধান দরজা বা টয়লেটের দরজার দিকে মুখ করে বসানো না হয় তা সুনিশ্চিত করতে হবে৷ ● বাড়ির ক্ষেত্রে অনেকে জায়গার অভাবে সিঁড়ির নীচেও রান্না করে থাকেন৷ এটি কোনওভাবেই বাস্ত্তসম্মত নয়৷ ● রান্নাঘরের ইলেকট্রিকাল সাজ-সরঞ্জাম যেমন মিক্সার, গ্রাইন্ডার, টোস্টার, মাইক্রোওভেন ইত্যাদি রাখুন রান্নাঘরের দক্ষিণ-পূর্ব কোণে৷ জায়গা না থাকলে দক্ষিণ দিকের দেওয়ালেও রাখতে পারেন৷ ● রান্নাঘরের গরম বাতাস বা ধোঁয়া বের করে দেওয়ার জন্য একজস্ট ফ্যান বা চিমনি ইত্যাদি লাগান দক্ষিণ দিকের দেওয়ালে৷ ● রান্না ঘরের কল বা জল সম্পর্কিত জিনিষ রাখুন উত্তর-পূর্ব কোণে৷ ● অ্যাকোয়াগার্ড, ফিল্টার, জলের জালা বা পাত্র ইত্যাদি থাকবে এই উত্তর-পূর্ব কোণেই৷ ● কিচেন বেঞ্চ মার্বেল বা অন্য কোনও স্টোন দিয়ে করা যেতে পারে৷ কিন্ত্ত গ্র্যানাইট ব্যবহার না করতে পারলেই শুভ৷ ● স্টেনলেস সিঙ্ক ব্যবহার করা যেতে পারে৷ মোজাইক বা মার্বেলের সিঙ্কও বসানো যায়৷ আপনার সুবিধামত এই ধরনের সিঙ্ক রান্নাঘরের দক্ষিণ দিকে বসানোর চেষ্টা করবেন৷ কোনওভাবেই উত্তর-পূর্ব দিকে বসাবেন না৷ ● জায়গার অভাবে আজকাল ভাঁড়ার ঘর ব্যাপারটা উঠেই গিয়েছে৷ তবু বাড়ির ক্ষেত্রে রান্নাঘরের উত্তর-পশ্চিমে, দক্ষিণে বা দক্ষিণ-পশ্চিমে ভাঁড়ার ঘর করা যেতে পারে৷ ● স্টেনলেস সিঙ্ক ব্যবহার করা যেতে পারে৷ মোজাইক বা মার্বেলের সিঙ্কও বসানো যায়৷ আপনার সুবিধামত এই ধরনের সিঙ্ক রান্নাঘরের দক্ষিণ দিকে বসানোর চেষ্টা করবেন৷ কোনওভাবেই উত্তর -পূর্ব দিকে বসাবেন না৷ ● জায়গার অভাবে আজকাল ভাঁড়ার ঘর ব্যাপারটা উঠেই গেছে৷ তবু বাড়ির ক্ষেত্রে বলি – রান্নাঘরের উত্তর-পশ্চিমে, দক্ষিণে বা দক্ষিণ-পশ্চিমে ভাঁড়ার ঘর হতে পারে৷ ● ফ্ল্যাটের ক্ষেত্রে এই ভাঁড়ার ঘরের বিকল্পই হল – কিচেন ক্যাবিনেট৷ এটি রান্নাগরের দক্ষিন বা দক্ষিণ-পশ্চিমে ভাঁড়ার ঘর করা যেতে পারে৷ ● বাসনপত্র রাখার র্যাকও দক্ষিণ বা দক্ষিণ-পশ্চিম দেওয়ালেই ভালো৷ ● মশলাপাতি, চাল, ডাল ইত্যাদির কৌটো যে র্যাক বা ক্যাবিনেটে রাখবেন তা কভারড না হওয়াই স্বাস্থ্যসম্মত, কিন্ত্ত এই সকল মশলাপাতির কৌটোর মুখ যেন কোনও সময়ই খোলা না থাকে৷ ● বঁটি, ছুরি ইত্যাদি যেখানে সেখানে ফেলে রাখবেন না৷ সব সময় কোনও কভারড জায়গায় রাখার চেষ্টা করুন৷ ● রোজের আবর্জনা ঢাকা দেওয়া বিনে ফেলুন৷ এই বিন রাখুন দক্ষিণ দিকে বা উত্তর পশ্চিম দিকে৷ পূর্বদিকে ডাস্টবিন রাখবেন না৷ রান্নাঘর থেকেই স্বাস্থ্যের সূচনা৷ তাই নিয়মিত এটি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখুন৷ পরিবারের সকলের সুস্বাস্থ্য সুনিশ্চিত করতে উপরিউক্ত টিপস যতটা সম্ভব মান্য করে কিংবা সুশিক্ষিত বাস্ত্ত-বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে আপনার বাড়ির রান্নাঘরটি সাজিয়ে ফেলুন একদম বাস্ত্ত পরিকল্পিত উপায়ে৷ তাহলেই সুস্বাস্থ্য, সম্পদ ও সৌভাগ্য আপনারও লাভ হতে পারে অচিরেই৷

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *