পুরাণে কোনও দুর্ঘটনা না ঘটলে বা যুদ্ধে আহত না হলে মানুষ কম করে একশ বছর বাঁচতেন। অথচ এখন ব্যাপারটা ঠিক উল্টো। মানুষে গড় আয়ু ঠেকেছে ৬০-এ। বিজ্ঞান এগিয়েছে। রোগমুক্তির হাজারো ওষুধ আবিষ্কৃত হয়েছে। তবু ৬০ পেরলেই মানুষ রোগে ভুগে পৃথিবী থেকে বিদায় নিচ্ছেন। এর কারণ কী? জেনে নিন পুরাণ থেকে।
প্রথম এবং প্রধান কারণ অহংকার। মহাভারতে বিদুর ধৃতরাষ্ট্রকে বলেছিলেন, অহংকার স্বল্পায়ুর একটি কারণ। অহংকার জীবনে পুণ্যের পরিমাণ কমিয়ে দেয়। এবং শারীরিক দিক থেকেও কমজোরি করে ফেলে। অহংকারের বশে ভালো-মন্দ বোঝার ক্ষমতাও লোপ পায়।
বেশি কথা বলা আয়ু কমে যাওয়ার আরেকটি কারণ। অনর্গল কথা বললে স্বাভাবিক ভাবেই শারীরিক শক্তির ক্ষয় হয়। এবং আমরা দুর্বল হয়ে পড়ি। তাই মাঝে মাঝে কম কথা বললে বা কথার পরিমাণ কমিয়ে দিলে আয়ু বাড়বে।
রাগ মানুষের সবচেয়ে বড়ো শত্রু। অতিরিক্ত রাগী মানুষের কাছে যেমন কেউ ঘেঁষতে চায় না তেমনি স্বল্পায়ুর কারণও এটি। রাগের মাথায় কাণ্ড-জ্ঞান খুইয়ে অনেক অন্যায় কাজ করে ফেলি আমরা। তাতে আমাদেরই ক্ষতি। এছাড়া, প্রচণ্ড রাগ শারীরিক শক্তির পরিমাণ কমিয়ে দেয়। তাই রাগী মানুষকে রোগে ধরে তাড়াতাড়ি।ফলাফল, অল্প বয়সেই মৃত্যু।
শুনলে হয়তো অবাক হবেন, যাঁদের জাগতিক মোহ বেশি তাঁরা তাড়াতাড়ি জগতের মায়া কাটান। অতিরিক্ত মোহবন্ধনে আবদ্ধ হয়ে এঁরা শারীরিক শ্রম করতে চান না। আর অতিরিক্ত আলস্যের জন্য শরীর অকর্মণ্য হয়ে পড়ে। এমন শরীর চট করে রোগগ্রস্ত হয়। আয়ুও কমে আসে। পুরাণ বলছে, অনেকদিন বাঁচতে চাইলে নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম করতে হবে।
অকারণে লোক-ঠকানোর ফল মৃত্যু-যন্ত্রণার মতোই কষ্টকর। কোনও ব্যক্তি কাউকে ঠকালে তার ওপর থেকে অন্যদের বিশ্বাস চলে যায়। এবং সেই ব্যক্তি যখন বিপদে পড়ে তখন তাকে কেউ সাহায্য করে না। বিপদে বন্ধুর সাহায্য না পাওয়ার ফলে যে কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয় এক কথায় তা মৃত্যু-যন্ত্রণার সামিল।
পুরাণ মতে, স্বার্থপর হওয়াটাও স্বল্পায়ুর কারণ। যে শুধুই নিজের জন্য বাঁচে, নিজের স্বার্থপূরণের জন্য কাজ করে তার আয়ু বেশি হয় না। অতিরিক্ত স্বার্থপরতা মানুষকে মানসিক বিকৃতিতে পৌঁছে দেয়। এবং এর জন্য যে মানসিক কষ্ট পেতে হয় তার থেকে মৃত্যু-যন্ত্রণা কিছু কম নয়।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *