আপনার যেটা প্রয়োজন সেটা কিনবেন। অযথা উটিউব দেখে বিভ্রান্ত হয়ে লাভ নেই। যদিও আগামী দিন আসছে যেখানে এক আর এক এর যোগফল উটিউব না দেখলে আমরা জানতেও পারবোনা।

১. পৌরাণিক পটভূমি ও তাৎপর্য:
​ধনতেরাস উৎসবটি একাধিক পৌরাণিক কাহিনীর সঙ্গে যুক্ত।
​সমুদ্র মন্থন: সবথেকে প্রচলিত বিশ্বাস অনুসারে, সমুদ্র মন্থনের সময় এই দিনে (কার্তিক মাসের কৃষ্ণপক্ষের ত্রয়োদশী তিথিতে) দেবী লক্ষ্মী এবং ভগবান ধন্বন্তরি অমৃত কলস হাতে সমুদ্র থেকে উঠে এসেছিলেন।
​দেবী লক্ষ্মী: তিনি হলেন ধন, সম্পদ ও সমৃদ্ধির দেবী। তাই তাঁর আগমনকে স্মরণ করে এই দিনে তাঁর পূজা করা হয়, যাতে গৃহে সারা বছর ধন-সম্পদ থাকে।
​ভগবান ধন্বন্তরি: তিনি হলেন দেবগণের চিকিৎসক এবং আয়ুর্বেদের দেবতা। তাঁর হাতে থাকা অমৃত কলস সুস্বাস্থ্য ও আরোগ্যের প্রতীক। তাই রোগমুক্তির জন্য এই দিনে তাঁর পূজা করা হয়। এই কারণে দিনটিকে ‘ধন্বন্তরি জয়ন্তী’ও বলা হয়।
​রাজা হিমার কাহিনী (যম দীপম): একটি কিংবদন্তি অনুসারে, রাজা হিমার পুত্রকে সাপে কেটে তার বিবাহের চতুর্থ দিনে মৃত্যু বরণ করতে হবে বলে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছিল। নববধূ স্বামীকে বাঁচাতে সেই রাতে ঘরের প্রবেশদ্বারে সোনা ও রূপার অলঙ্কার এবং মুদ্রার স্তূপ করে রাখেন এবং সারারাত প্রদীপ জ্বালিয়ে ভজন-গান করেন। যখন যমরাজ সাপের রূপ ধরে রাজার পুত্রের কাছে আসেন, তখন প্রদীপের আলোয় তাঁর চোখ ধাঁধিয়ে যায় এবং তিনি সেই সোনা-রূপার স্তূপের উপর বসে পড়েন। সারারাত গান শুনে তিনি মুগ্ধ হন এবং সকালে রাজার পুত্রকে স্পর্শ না করে ফিরে যান। সেই থেকে অকাল মৃত্যু এড়াতে যমরাজের উদ্দেশ্যে প্রদীপ জ্বালানোর প্রথা শুরু হয়, যা ‘যম দীপম’ নামে পরিচিত।
​২. পালনের প্রধান নিয়ম ও আচার:
​ঘর পরিষ্কার ও সজ্জা: দীপাবলির প্রস্তুতির অংশ হিসেবে এই দিন ঘর-বাড়ি সম্পূর্ণ পরিষ্কার করা হয়। লক্ষ্মী দেবীকে স্বাগত জানাতে প্রবেশপথ ও ঘরের বিভিন্ন স্থানে রঙ্গোলি আঁকা হয় এবং রঙিন আলো ও প্রদীপ দিয়ে সাজানো হয়।
​কেনাকাটা (আসল আকর্ষণ): এই দিন শুভ ‘মুহূর্ত’ বা শুভক্ষণে নতুন জিনিস কেনা খুবই শুভ বলে মনে করা হয়।
​সোনা ও রূপা: সোনা ও রূপার গহনা, মুদ্রা বা বাসনপত্র কেনা এই দিনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আচার। বিশ্বাস করা হয়, এতে সম্পদ বহুগুণ বৃদ্ধি পায়।
​নতুন বাসনপত্র: বিশেষত তামা, পিতল বা স্টিলের বাসন কেনা হয়। এটিকে বাড়িতে লক্ষ্মী দেবীর আগমনের প্রতীক হিসেবে দেখা হয়।
​ঝাড়ু: অনেকেই ঝাড়ু কেনেন, কারণ ঝাড়ুকে অলক্ষ্মী বা দারিদ্র্য দূর করার প্রতীক হিসেবে গণ্য করা হয়।
​লক্ষ্মী-গণেশ মূর্তি: দীপাবলির রাতে পূজার জন্য লক্ষ্মী ও গণেশের মূর্তি কেনা হয়।
​পূজা: সন্ধ্যায় দেবী লক্ষ্মী, ধনদেবতা কুবের এবং ভগবান ধন্বন্তরির পূজা করা হয়। নতুন কেনা বাসনপত্র, সোনা-রূপা বা টাকা-পয়সা পূজার স্থানে রাখা হয়।
​পূজার সময় ফুল, মিষ্টি ও বিশেষ করে ধনে বীজ (গোটা ধনে) নিবেদন করা হয়।
​যম দীপম: সন্ধ্যায় বাড়ির বাইরে, বিশেষত দক্ষিণ দিকে মুখ করে একটি প্রদীপ জ্বালানো হয় এবং যমরাজের কাছে পরিবারের মঙ্গল কামনা করে প্রার্থনা করা হয়।
​৩. আধ্যাত্মিক গুরুত্ব:
​ধনতেরাস কেবল ধন-সম্পদের উৎসব নয়, এটি সুস্বাস্থ্য, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও ইতিবাচকতাকে বরণ করার উৎসব।
​স্বাস্থ্য: ধন্বন্তরি পূজার মাধ্যমে স্বাস্থ্য এবং দীর্ঘায়ু কামনার গুরুত্ব তুলে ধরা হয়।
​সমৃদ্ধি: লক্ষ্মী ও কুবেরের পূজার মাধ্যমে শুধু অর্থ নয়, জীবনের সকল ক্ষেত্রে সমৃদ্ধি ও প্রাচুর্য কামনা করা হয়।
​আলো: প্রদীপ জ্বালানোর মধ্য দিয়ে জীবনের অন্ধকার (অশুভ শক্তি, দারিদ্র্য, অসুস্থতা) দূর করে আলো (মঙ্গল, শুভ শক্তি, সমৃদ্ধি) প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানানো হয়।

সবাই ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন। আধ্যাত্বিকার মধ্যে বিজ্ঞান থাকবেই। শুধুই খুঁজতে হবে।

আমি নিত্য গোপাল।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *